প্রদীপ্ত বলেছিল, “আমরা হানিমুনে মাউন্ট রাসমোর-এ গেছিলাম।

 


প্রদীপ্ত বলেছিল, “আমরা হানিমুনে মাউন্ট রাসমোর-এ গেছিলাম। সেই প্রথম মনে হয়েছিল কোথাও একটা গণ্ডগোল হয়েছে। দেবী নিজেই যেতে চেয়েছিল… আমি ভেবেছিলাম হাওয়াই যাব। সেমেস্টার চলাকালীন ছুটি নিয়েছে, তাই দূরে যেতে রাজি হল না। ঠিক হল একটা ভালো লজ-এ থাকব, আর রাসমোর থেকে ড্রাইভ করে গ্র্যান্ড টিটন পার্ক দেখে আসব। সাতদিনের প্রোগ্রাম। যেদিন পৌঁছেছি সন্ধে নেমে গেছিল। পরদিন বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারল না দেবী। শরীর খারাপ? – না; মন খারাপ? – না; রাগ হয়েছে? – না। শুধু চোখ বুজে শুয়ে রইল বিছানা আঁকড়ে। এমনটা চলল ছ’দিন। দু’চোখ বন্ধ, কুণ্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। আমি হাতে করে খাইয়ে দিলে একটু মুখে দেয়, নইলে শুধু বাথরুমে যেতে ওঠে। ডাক্তার ডাকতে দেবে না। প্রথমে ভাবলাম মা-বাবার জন্যে দুঃখ হচ্ছে, তারপর মনে হল আমার মা জোর করাতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে – তাই।”

মনে হওয়াই স্বাভাবিক। যে মেয়ে প্রতি মুহূর্তে ফুলঝুরির মতো ঝিকমিক করে সে যদি বাক্যিহারা হয়ে দিনের পর দিন শুয়ে থাকে, তাহলে জবরদস্তি করা হয়েছে মনে তো হবেই! মজার কথা, রাসমোর থেকে ফেরার পথে বিষাদ ফিকে হতে আরম্ভ করল। আগের চাঞ্চল্য ফিরে না পেলেও দেবত্রী সামলে উঠল। ক’দিন পরে এই নতুন দেবত্রীকে অনেক বেশি ম্যাচিয়োর মনে হল প্রদীপ্তর, অনেক বেশি সংযত। কম্যুনিটির মাসিরা মুখ টিপে হাসলেন, ‘বিয়ের জল গায়ে লেগেচে বলে কতা!’ 

প্রদীপ্তর মনের কোনায় এক টুকরো কালো মেঘ লুকিয়ে ছিল বৈকি, কিন্তু দিনের পর দিন বউয়ের অবিমিশ্র প্রেমের প্রকাশ আর টিপটপ সংসার চালানোয় সেটা হালকা হয়ে মিলিয়ে গেল একদিন। দেবত্রী পড়াশোনা করে, গান গায়, রান্না করে, বাড়িঘর তকতকে রাখে। প্রদীপ্তকে কিচ্ছু করতে হয় না – করতে দেয় না। ওদের ছবির মতো কুহু-কুহু দুঁহু-দুঁহু অ্যাপার্টমেন্ট দেখে বন্ধুরা নিজেদের স্ত্রীদের খোঁটা দেয় আর প্রদীপ্তকে বলে ‘উফ্‌, তোর বউ কী কাজের রে! দেরিতে বিয়ে করে জিতে গেলি!’ 

Comments